Tuesday, December 1, 2015

একজন সুখী মানুষের গল্প (জীবনযাপন)

সুখী মানুষের গল্পটি ছোটবেলায় অনেকেরই পড়া। বাস্তব জীবনে সুখী মানুষের সংখ্যা কম। ৩০ নভেম্বর বাস্তবেই দেখা মিলল একজন সুখী মানুষের। তিনি ইকবাল হাবিব। স্থপতি। যিনি নিজেকে ‘সুখী মানুষ’ বলেন। তাঁর জীবনে যেমন কাজ করতে চেয়েছেন, তেমনই তিনি করে যাচ্ছেন। কোনো কিছু নিয়ে অতৃপ্তি নেই তাঁর জীবনে। থাকবেই বা কেন, ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প, ধানমন্ডি লেক ও এর আশপাশের এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি), চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, সিলেটের দুসাই রিসোর্টসহ দৃষ্টিনন্দন, গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও স্থাপত্যের অন্যতম নকশাকার তিনি। স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হাবিব।ভোর পাঁচটায় সাধারণত ঘুম থেকে ওঠেন। নামাজ পড়ে প্রায় পৌনে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটেন। এরপর কিছুক্ষণ ব্যায়াম করেন। ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সকােল প্রথম আলো পত্রিকা হাতে নিয়ে পুরোটা পড়ি। ঝিমুনি এলে একটা “ঝিমঝিম ঘুম”ও দিই। নাশতা খেয়ে সাড়ে নয়টার দিকে অফিস চলে যাই।’ গাড়িতে বসে মুঠোফোনে সারেন দরকারি ফোন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলে স্থাপত্যচর্চা। ডিজাইন ব্রিফিং, ক্লায়েন্ট মিটিং, কনস্ট্রাকশন নিয়ে আলোচনা তো আছেই। ‘এসব কাজের মধ্যে নগরে পরিবেশ বিষয়ে কিছু ঘটলে সাংবাদিকদেরও সময় দিতে হয়। টক শোও থাকে।’ বলেন ইকবাল হাবিব। সন্ধ্যার পর অনেকটা সময় যায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কার্যালয়ে। এই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক তিনি। আরও কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের ফেলো ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।প্রকৃতি পরিবেশ কতটা প্রিয়, সেটি ঢাকায় ধানমন্ডিতে ইকবাল হাবিবের বাসার বসার ঘরের দরজা দেখলে বোঝা যায়। জীবনানন্দ দাশের ‘তোমার যেখানে সাধ চলে যাও’ কবিতার পঙ্ক্তিগুলো খোদাই করা কাচের দরজায়: ‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও—আমি এই বাংলার পারে র’য়ে যাব/ দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে...।’ আরেকটি দরজায় লেখা জসীমউদ্দীনের ‘আমার বাড়ি’ কবিতার ‘আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর, বসতে দেব পিঁড়ে/ জলপান যে করতে দেব/ শালি ধানের চিঁড়ে।
ইকবাল হাবিব বলেন, ‘জীবনে ভালো কিছু করতে হলে দেশ, দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে। এই ভালোবাসা হতে হবে সহমর্মিতার, দায়িত্ববোধের।’ যেহেতু তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থা থেকে বিভিন্ন রকম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই নজরুলের কবিতা তাঁকে বেশি টানে। এখন গল্পের বই পড়ার সময় খুব একটা না মিললেও রাতে ঘুমানোর আগে স্থাপত্য ও পরিবেশবিষয়ক কোনো না কোনো বই পড়েন তিনি। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ও লুই আই কানের জীবন দর্শন তাঁকে প্রভাবিত করে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন। এরপর হতে চান গায়ক। গানের তালিম নেন ওস্তাদ বেদারউদ্দীনের কাছে। ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ার সময় গানের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ‘স্থপতি না হলে আমি গায়কই হতাম। গান শুনতে, গান গাইতে খুব ভালো লাগে। আমার জীবনের আনন্দ বেদনার সাক্ষী গান। শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও মাহমুদুন নবী প্রিয় শিল্পী। একটা সময়ে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেকে গানের ছোট ছোট বই কিনতাম। কত গান যে আমার মুখস্থ।’
আরও একটি গোপন কথা জানা গেল তাঁর বাসায় গিয়ে। স্ত্রী স্থপতি শাহনাজ পারভীন জানালেন, নিরীক্ষাধর্মী রান্না খুব ভালো পারেন ইকবাল হাবিব। তবে ইকবাল হাবিবের প্রিয় খাবার ইলিশ মাছ। ‘মাঝেমধ্যে মনে হয় ইলিশ মাছ খাওয়ার জন্য বাংলাদেশে জন্ম সার্থক হয়েছে। বিদেশে গেলে ইলিশ মাছের মতো স্বাদ বলে স্যামন মাছ খাই।’ মজা করে বলেন তিনি। দুই ছেলে সাদমান ইকবাল ও আবরার ইকবালের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব তাঁর। সময় পেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশে-বিদেশে ঘুরতে বের হন।
পোশাক নিয়ে অত ভাবনা না থাকলেও সাদা ও সবুজ রঙের পোশাক পছন্দ করেন। বেশির ভাগ পোশাক স্ত্রী কিনে দেন। বাড়িতে ফতুয়া, টি-শার্ট পরলেও পাঞ্জাবি পরতে ভালো লাগে।
এই হলো সুখী মানুষ ইকবাল হাবিবের গল্প।

No comments:

Post a Comment